মোবাইলে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম 2023

আপনি মোবাইলের মাধ্যমে কিভাবে ট্রেনের টিকিট কাটবেন সে আলোচনা নিয়েই শুরু করলাম আজকের এই অনুচ্ছেদ। বাংলাদেশ রেলওয়ে। কথাটি শুনলেই আমাদের সবার আগে সে ট্রেনের কথা মনে পড়ে যায় আর ট্রেনে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগেই দরকার হয় টিকেট এর। আর টিকেট বলতেই মনে পড়ে যায় সেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করা। তবে এখন অনেক সুবিধা রয়েছে এখন আর লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।

এখন আপনি ইচ্ছে করলেই ঘরে বসে খুব সহজে ট্রেনের টিকেট কেটে নিতে পারবেন। যারা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করেন তারা হয়তো জানেন আমরা সব সময় আপনাদের জন্য নতুন নতুন তথ্য নিয়ে আসি এবং আপনারা কমেন্টের মাধ্যমে যেসব সমস্যার কথা আমাদের জানান আমরা চেষ্টা করি আপনাদের সেই সব সমস্যার সমাধান দেওয়ার। ঠিক আজকেও আমরা একটি নতুন অনুচ্ছেদ নিয়ে এসেছি সেটা হল আপনারা মোবাইলের মাধ্যমে কিভাবে ট্রেনের টিকেট কাটবেন নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মোবাইলে ট্রেনের টিকিট কেন কাটবেন

আপনার কোন জরুরী প্রয়োজনে আপনি দূরে কোথাও যেতে চাচ্ছেন অথবা দূরে কোথাও ভ্রমণে যেতে চাচ্ছেন। এবং আপনার ইচ্ছা হল ট্রেনে যাওয়া আর ট্রেনে যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে টিকেট কাটতে হবে। এর জন্য আপনাকে সরাসরি ট্রেনের কাউন্টারে উপস্থিত হতে হবে এবং সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করে আপনার কাংখিত টিকিট কাটতে হবে। এটা ছিল অনেক আগের কথা।

এখন তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে আগের মত লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয় না এবং এত কষ্ট করে টিকিট কাটতে হয় না অথবা কোন দালালের পাল্টায় পড়ে হয়রানির শিকার হতে হয় না এখন আপনি ইচ্ছা করলেই ঘরে বসেই কেটে নিতে পারবেন আপনার পছন্দের সিট অনুযায়ী টিকেট। এতে করে আপনার আর কষ্ট করতে হবে না এবং হয়রানি হতে হবে না আর আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় হবে না।

বর্তমান যুগে সময়ের মূল্য অনেক বেশি এবং মানুষ একটু সুবিধা পাওয়ার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করতে পারে মানুষ ঘরে বসে যদি ট্রেনের টিকিট পেয়ে যায় তাহলে বেশিরভাগ মানুষই এভাবে টিকিট কিনতে আগ্রহী হবে এতে করে আপনার মূল্যবান সময় বেচে যাবে এবং দীর্ঘক্ষণধরে আপনাকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবেনা যা একটি বিরক্তকর অভিজ্ঞতা।

তাছাড়া ট্রেনে ভ্রমণ করার একটা আলাদা রকম ভালোলাগা আছে সেটা হচ্ছে ট্রেনে ভ্রমণ করলে কোন যানবাহনে ঝঞ্ঝাটে পড়তে হয় না এবং অনেক নিরিবিলি একটা পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনেক দূরে কোথাও ভ্রমন করা যায় এতে করে অনেক আনন্দ পাওয়া যায় মন মানসিকতা ভালো থাকে এবং অনেক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়। আর এসব সুবিধার জন্য অনেকে আছেন যারা ট্রেনে ভ্রমণ করতে বেশি পছন্দ করেন কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ জানেন না যে ট্রেনের টিকেট ঘরে বসেও কাটা সম্ভব।

 আপনি কিভাবে মোবাইল থেকে ট্রেনের টিকিট কাটবেন

  • আপনি আপনার যাত্রা শুরু করার আগে আপনার টিকিট কাটা উচিত। শেষ সময়ে টিকিট পাওয়া যায় না তাই আগে থেকেই ট্রেনের টিকিট কেটে নিশ্চিন্তে থাকা ভালো। এখন ট্রেনের টিকিট অনেক মাধ্যম দিয়ে কাটা যায়। অনেকেই মনে করেন শুধুমাত্র কম্পিউটার ব্যবহার করে ট্রেনের টিকিট কাটা যায় কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। বর্তমানে আপনি আপনার ব্যবহৃত স্মার্ট এন্ড্রয়েড ফোনটি দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন। খুব সহজে আপনি বাংলাদেশ রেলওয়ের রেলসেবা নামক অ্যাপ এর মাধ্যমে আপনার কাংক্ষিত টিকিট কিনতে পারেন। এখন আমরা আপনাদের খুব সহজেই দেখাবো কিভাবে অ্যাপস ব্যবহার করে আপনি টিকিট কাটার সম্পূর্ণ করতে পারবেন।
  • মোবাইল এর মাধ্যমে রেলসেবা অ্যাপ দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম
  • আপনাকে মোবাইল ফোন দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটতে হলে সর্বপ্রথম একটি কাজ করতে হবে। আপনার মোবাইলটি অবশ্যই অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন হতে হবে। এন্ড্রয়েড স্মার্ট ফোন ছাড়া কোন ভাবে আপনি ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন না।
  • এখন আপনি সেই স্মার্ট ফোনের ইন্টারনেট কানেকশন অন করে গুগল প্লে স্টোরে প্রবেশ করুন। প্লে স্টোরে প্রবেশ করার পরে আপনি সার্চ অপশনে গিয়ে Rail-seba লিখে সার্চ দিন। সঙ্গে সঙ্গে আপনি রেলওয়ে অ্যাপস টি দেখতে পাবেন।
  • আপনি গুগল প্লে স্টোর হতে অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন এবং ইন্সটল করে নিন।
  • এখন আপনাকে যা করতে হবে সেই অ্যাপসটিতে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। অ্যাকাউন্ট খোলা ছাড়া আপনি সেইখান থেকে টিকিট কিনতে পারবেন না। তাই একাউন্ট খুলতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন এর জন্য আপনাকে তিনটি জিনিস প্রয়োজন পড়বে। সেই তিনটি জিনিস নিচে উল্লেখ করলাম
  1. আপনার এনআইডি কার্ড এর নম্বর
  2. আপনার মোবাইল নম্বর
  3. আপনার একটি জিমেইল নাম্বার
  • আপনি এই তিনটি তথ্য দিয়ে অ্যাপ এ রেজিস্ট্রেশন করে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য অ্যাপ টিতে প্রবেশ করুন।
  • এখন টিকিট কাটার জন্য আপনাকে বাই টিকিট বা পারচেজ টিকিট অপশন এ প্রবেশ করতে হবে। এই অপশনে প্রবেশ করার পরে আপনার সামনে একটি ইন্টারফেস আসবে। এখানে কিছু তথ্য দিতে হবে।
  • প্রথমত আপনাকে লিখতে হবে আপনি কোথা থেকে যাত্রা শুরু করতে চাচ্ছেন। আপনি কোথায় যাত্রা শেষ করতে চাচ্ছেন সেটিও উল্লেখ করতে হবে। এরপরে আপনাকে লিখতে হবে আপনার যাত্রা ডেট। এরপরে যে অপশনটি রয়েছে সে অপশনটিতে আপনাকে আপনার নির্ধারিত সিট এর পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। আপনি কয়টি সিট নিতে চাচ্ছেন সেটা উল্লেখ করতে হবে। সর্বশেষ যে ধাপ রয়েছে সেটিতে আপনাকে সিট এর শ্রেণী নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত চেয়ার, শোভন ,এসি ইত্যাদি শ্রেণি থেকে আপনি যেকোনো একটি নির্বাচন করতে পারেন।
  • এই পর্যায়ে আপনার সামনে যে নতুন পেজ ওপেন হবে সেখানে অনেকগুলো ট্রেনের লিস্ট দেওয়া থাকবে। লিস্ট এর পাশাপাশি ট্রেনের যাত্রার সময় এবং টিকিট মূল্য দেওয়া থাকবে। আপনার সুবিধা অনুযায়ী সময় মত যে ট্রেনে যেতে চাচ্ছেন সেই ট্রেনটির উপর ক্লিক করুন।
  • এরপরে আপনাকে ট্রেনের সিট নির্বাচন করতে বলা হবে। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী সিট টি নির্বাচন করবেন। এক্ষেত্রে যে সিটগুলো লাল রংয়ের হবে সেগুলো আপনার বুকিং দেওয়ার আগে বুকিং হয়ে গেছে। আপনি সবুজ রঙের সিটগুলো হতে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সিট সিলেক্ট করুন। তবে একটি কথা বলতে হয় সব শ্রেণীর জন্য সিট নির্বাচন করা যায় না।
  • আপনি সিট টি নির্বাচন করার পরে আপনাকে টিকিটের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। সম্পূর্ণ অনলাইন পেমেন্ট এর মাধ্যমে আপনাকে এই মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এখানে অনেকগুলো অপশন রয়েছে যার দ্বারা আপনি আপনার ট্রেনের টিকিটের পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারেন।
  1. ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে
  2. ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে
  3. রকেট এর মাধ্যমে
  4. ভিসা কার্ডের মাধ্যমে
  5. বিকাশের মাধ্যমে
  • আপনি কোনটা দিয়ে পেমেন্ট করতে চাচ্ছেন সেটির উপর ক্লিক করে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন। আমরা বিকাশের মাধ্যমে কিভাবে ট্রেনের টিকিট এর পেমেন্ট সম্পূর্ণ করা যায় সে সম্পর্কে একটি সম্পুর্ন পোস্ট এরপরে আপলোড করব অবশ্যই আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট এর মাধ্যমে সেটি জানতে পারবেন।
  • আপনি যখন আপনার টিকেটের পেমেন্ট সম্পূর্ণ করবেন তখন আপনাকে আপনার অ্যাপ থেকে ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করতে হবে। বা আপনার টিকেট হিস্টোরিতে বা জারনি হিস্টোরিতে প্রবেশ করতে হবে। আপনি যখন এখানে প্রবেশ করবেন তখন এখানে আপনার টিকেট টি পিডিএফ আকারে চলে আসবে। তবে সর্বোচ্চ 30 মিনিট সময়ের মধ্যে টিকিট আসে।
  • আপনি সেখান থেকে আপনার টিকিটের ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন এবং এককপি টিকিট প্রিন্ট আউট করে নিন। যাত্রা শুরুর সময়ে সঙ্গে করে এক কপি প্রিন্ট করা টিকেট নিয়ে যাবেন।
  • ঠিক এইভাবে এত সহজে একজন ব্যক্তি তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বর্তমানে বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে যে কোন ট্রেনের টিকিট কাটতে পারে। আমার কাছে মনে হয় এখন আপনারা সকলেই নিজে থেকে নিজের ফোন ব্যবহার করে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন।