অনলাইনে বাসের টিকিট কাটার নিয়ম ২০২৩

আপনি কিভাবে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বাসের টিকিট কাটবেন সেই সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে শুরু করলাম আজকের আমাদের অনুচ্ছেদ। যারা আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত ভিজিট করেন তারা হয়তো জানেন আমরা সম্পূর্ণ টেকনোলজি সম্পর্কিত তথ্যগুলো নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা করি এবং নতুন নতুন তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আপনারা কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কিভাবে অনলাইনে বাসের টিকিট কাটা যায়।

আমরা আপনাদের কমেন্টের ওপর ভিত্তি করে আজকে লিখতে যাচ্ছি কিভাবে অনলাইনে ঘরে বসেই আপনি বাসের টিকিট কেটে নিতে পারবেন। আমরা চেষ্টা করবো আপনাদের পুরো বিষয়টি খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার। আমরা চেষ্টা করব প্রত্যেকটি তথ্য আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার। আপনারা আমাদের পুরো অনুচ্ছেদটি ভালোভাবে পড়ে নিবেন।

অনলাইনে বাসের টিকিট

আপনি কোন জরুরী কাজে দূরে কোথাও যেতে চাচ্ছেন। আপনি বাসে যাতায়াত করবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আগে থেকে বাসের টিকিট কাটতে হবে। এর জন্য আপনাকে একদিন বা দুইদিন আগে বুকিং দিতে হবে। আপনাকে সরাসরি বাসের কাউন্টারে উপস্থিত হতে হবে এবং সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করে আপনার কাঙ্খিত টিকিট কাটতে হবে। এটা ছিল কয়েক বছর আগের গল্প। আমি যদি বলি এটা একটি গল্প তাও অনেকে হয়তো রাগ করবেন না কারণ বর্তমানে আপনারা চাইলে এই পদ্ধতি বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

আপনি চাইলে ঘরে বসে আপনার মূল্যবান সময় বাঁচিয়ে অনলাইনে বাসের টিকিট কাটতে পারেন। বর্তমান যুগে সময়ের মূল্য অনেক বেশি এবং মানুষ একটু অসুবিধে পাওয়ার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করতে পারে। মানুষ ঘরে বসে যদি বাসের টিকিট পেয়ে যাই তাহলে বেশিরভাগ মানুষই এইভাবে টিকিট কিনতে আগ্রহী হবে। এতে করে আপনার মূল্যবান সময় বেচে যাবে এবং দীর্ঘক্ষন ধরে আপনাকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না যা একটি বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা।

বেশিরভাগ মানুষ রয়েছেন যারা জানেননা কিভাবে অনলাইন থেকে বাসের টিকিট কাটতে হয়। আসলে এ বিষয়টি খুব বেশি আলোচনায় আসে না তাই হয়তো অনলাইনে বাসের টিকিট কাটা বিষয়টি অনেকেই জানেন না। আপনারা যারা এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী রয়েছেন তারা আমাদের এই অনুচ্ছেদের নিচের অংশটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন এবং আপনার কাংখিত তথ্যটি জেনে নিন।

কিভাবে অনলাইনে বাসের টিকিট কাটবেন

আপনি চাচ্ছেন ঘরে বসেই আপনার জরুরি বাসের টিকিট কাটবেন। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইট এই সুবিধাটি করে দিয়েছে। Sohoz.com এর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই যেকোনো বাসের টিকিট কিনতে পারেন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশের জনগণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কাটার ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়েছে। আপনি এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আপনার অনলাইনে টিকিট খুব সহজেই  কাটতে পারেন। এছাড়াও আপনি এই ওয়েবসাইটের অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেন। আপনাদের আমি এখন ধাপে ধাপে কিভাবে টিকিট কাটতে হয় তা জানাবো।

  • আপনাকে সর্বপ্রথম আপনার মোবাইলে অথবা কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেকশন অন করতে হবে। আপনি যদি সরাসরি অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুকে টিকিট কাটতে চান তাহলে আপনাকে একটি ব্রাউজার ওপেন করে সেখান থেকে shohoz.com লিখে সার্চ দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আপনার সামনের shohoz.com চলে আসবে। আপনি যদি অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটতে চান তাহলে গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে সার্চ দিবেন shohoz.com এবং সঙ্গে সঙ্গে এই অ্যাপটি দেখতে পাবেন। আপনি অ্যাপটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন।
  • এখন যারা ওয়েবসাইট দিয়ে টিকিট কাটতে চান তারা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন এবং যারা অ্যাপ দিয়ে টিকিট কাটতে চান তারা অ্যাপস এ প্রবেশ করুন। প্রবেশ এর সঙ্গে সঙ্গে আপনার সামনে যে পেইজ বা ইন্টারফেস আসবে সেখানে আপনার টিকিটের সময় এবং তারিখ উল্লেখ করতে হবে। আপনি কোন দিনে টিকিট কাটতে চাচ্ছেন এবং কোথায় থেকে টিকিট কাটতে চাচ্ছেন সেটা উল্লেখ করে পরবর্তী বাটনে চাপ দিন।
  • এরপরে আপনার সামনে চলে আসবে আপনার জন্য বরাদ্দকৃত বাসের লিস্ট গুলো। অবশ্যই এর নাম এবং পাশে টিকিটের মূল্য দেওয়া থাকবে। আপনি যদি কোন ডিসকাউন্ট পেয়ে থাকেন তাহলে সেখানে সেটি উল্লেখ করা থাকবে। আপনি যে বাসে যেতে চান সেই বাসটি সিলেক্ট করুন।
  • বাস সিলেট করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার সামনে নতুন একটি পেজ বা ইন্টারফেস ওপেন হবে। সেখানে আপনাকে বাসের সিট সিলেক্ট করতে বলা হবে। আপনি সেই ইন্টারফেসে বাসে সবগুলো সিটের ছবি দেখতে পারবেন। যে সিটগুলো বুকিং হয়ে গেছে সেগুলো লাল অথবা কালো রং হয়ে যাবে এবং যেগুলো এখনও ফাঁকা রয়েছে সেগুলো সবুজ অথবা সাদা রং থাকবে। আপনি আপনার পছন্দ প্রয়োজন অনুযায়ী সিট সিলেক্ট করুন এবং ওকে করুন।
  • আপনি  সিট সিলেক্ট সম্পূর্ণ করার পরে আপনার সামনে যে ইন্টারফেজ ওপেন হবে সেখানে কাস্টমার যাত্রীর ডিটেলস দিতে হবে। আপনি যদি একটি সিট কিনেন তাহলে একজনের ডিটেলস, যদি দুইটি বা তার বেশি সিট কিনেন তাহলে তাদের ডিটেলস সেখানে দেওয়া লাগবে। তবে এক্ষেত্রে যদি ভুল হয় তাহলে কোন সমস্যা হবে না। আপনি এই তথ্যগুলো দিয়ে টাকার মোট পরিমাণ চেক করে ওকে করুন।
  • এখন আপনাকে টিকিটের টাকা পেমেন্ট করতে হবে। পেমেন্ট অপশনে অনেকগুলি অপশন দেখা যাবে। আপনি যদি বিকাশ থেকে পেমেন্ট করতে চান তাহলে সেখানে বিকাশের পেমেন্ট অপশন রয়েছে। আপনি চাইলে ইব্যাংকিং সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করতে পারেন। সেখানে আরও রয়েছে ডাচবাংলা এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এবং রকেটের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট এর সুবিধা। এছাড়াও বিভিন্ন ভিসা কার্ডের নাম্বার দিয়ে ও আপনি টিকিটের টাকা পেমেন্ট করতে পারেন। আপনাকে সিট সিলেক্ট এর 30 মিনিটের মধ্যে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে না হলে আপনার সিট সিলেক্ট পুনরায় করতে হবে।
  • আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করুন। আমি বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পছন্দ করি তাই পেমেন্ট অপশন এ বিকাশ সিলেক্ট করব। এরপরে মার্চেন্ট পেমেন্ট অপশনে প্রবেশ করব। সেখানে আমার বিকাশ নম্বরটি প্রবেশ করাবো। এরপরে আমার বিকাশ মোবাইল নম্বরে একটি ও টি পি কোড আসবে যা আমাকে যথাস্থানে বসিয়ে ভেরিফাই করতে হবে। এরপরে আমাকে বিকাশ এর পিন নম্বর দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে।
  • আপনি অবশ্যই পেমেন্ট করার পূর্বে বিকাশ থেকে পেমেন্টের টাকার পরিমাণটা ভালোভাবে দেখে নিবেন। আপনি যদি টিকিটের সংখ্যা ভুল করেন তাহলে টাকার পরিমাণ ও ভুল হবে। অনেক সময় বিকাশ এর মাধ্যমে পেমেন্ট করলে ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। সব সময় না পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ সময় বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট কড়লে আপনি 10% ক্যাশ ব্যাক পেতে পারেন।
  • আপনি পেমেন্ট সম্পূর্ণ করলেই ডাউনলোড টিকেট অপশন চলে আসবে। আপনি সেখান থেকে আপনার টিকেট টি ডাউনলোড করে নিন। তবে এক্ষেত্রে 30 মিনিট সময় লাগতে পারে টিকেট আসতে। এর পরে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ডে চলে যান এবং সেখান থেকে টিকিট টা প্রিন্ট করে নিন। আপনি অবশ্যই যাত্রা শুরুর সময় টিকিটের প্রিন্টিং কপিটি সঙ্গে রাখবেন।

আপনাদের উদ্দেশ্যে শেষ কিছু কথা

তথ্য ও প্রযুক্তির জোরে আমরা দিন দিন সবকিছু সহজ করে ফেলছি। অনলাইনে ঘরে বসে বাসের টিকিট কাটা তার মধ্যে একটি। আপনি অবশ্যই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সতর্কতার সঙ্গে অনলাইনে টিকিট কাটবেন। এতে করে আপনি বিভিন্ন ধরনের দালালের হাত থেকে মুক্ত পাবেন এবং সঠিক টিকিট আপনার হাতে পাবেন।

অবশ্যই আপনার নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই টিকিট কাটা সম্পন্ন করবেন। বিশেষ করে ঈদের সময় বাংলাদেশ বাসের টিকিট নিয়ে অনেক ভোগান্তির চিত্র দেখা যায়। বর্তমানে এই সুবিধা চালু হওয়ার পরে এই চিত্র কিছুটা কমলেও পুরোপুরি কমতে পারে নি। ভবিষ্যতে আমরা যেন খুব সহজেই এবং যখনতখন বাসের টিকিট পেতে পারি সেই আশা রেখে আজকের অনুচ্ছেদ শেষ করলাম।